Wednesday, July 29, 2015

ধূসর সময়

একাকী বসে থাকা একটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে অদ্রির। একটু সুযোগ পেলেই হয়। কোন একটা নির্জন জায়গা খুজেঁ বসে পড়ে।
নদী তাকে একটু বেশিই টানে। পাহাড় তার পছন্দের জায়গা।
কি যে ভাবে এতো মেয়েটা তার মা নিজেই বুঝে উঠতে পারেনা।
ছাদের কোনটা থেকে অদ্রি মায়ের চিৎকার শুনতে পায়।
অদ্রি এই অদ্রি কইরে তুই?
উত্তর টুকু নিতেও ইচ্ছা হয়না অদ্রির।
মা খুব ভালো করেই জানে সে বাড়িতেই আছে তবুও এভাবেই চেঁচিয়ে ডাকবে তাকে।
ঘড়ে বাইরে দুটো মাত্র প্রানী অদ্রি আর তার মা।
অদ্রি এতো চুপচাপ থাকে যে তাকে কথা বলাতে এভাবেই মা কে চিল্লাতে হয়।
ধিরে ধিরে পা ফেলে অদ্রি নিচে নেমে মায়ের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
কিন্তুু কনো কথা বলে না।
কাজের ফাকে মুখ তুলে হটাৎ মেয়েকে দেখে চমকে ওঠে মা।
কিছু সময়ের জন্য ভুলেই যায় কেন ডেকে ছিলো সে অদ্রি কে।
চমক ভাংতেই মা একটু জোরেই বলে ওঠে কাছে এসে কথা না বলে কেউ এভাবে দাড়িয়ে থাকে?
তবুও অদ্রি চুপ।
নিজের মনে রাগ সামলে মা বলেন যাও হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে পড়তে বসো।
যেভাবে এসেছিলো সেই নিরব ভাবেই অদ্রি নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।
মেয়ের গমনে পথের দিকে তাকিয়ে মা একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
বাবা ছেড়ে চলে যাবার পর থেকেই মেয়ে টা এভাবেই চুপ হয়ে গেছে।
বাবা থাকতে সারাদিন ছিলো কতো যে কথা তার।
অদ্রির কথায় অতিষ্ঠ হয়ে মা বলতেন এবার কি একটু থামবি তুই অদ্রি। বাব্বা এতো বাচাও কি মানুষ হয়?
মা যতোই অদ্রিকে বকা দিতে অদ্রির বাবা আসফাক সাহেব ততোই আদর করে বলতো ইস্ কেন যে মেয়েটাকে খামাখা বীকোল্প তুমি?
এই একটাই তো ময়ে আমার,
আমার মা।
এই মেয়ে যদি কখনো চুপ হয়ে যায় তবে তো আমার পৃথিবী নীরব হয়ে যাবে।
মা বলতেন হয়েছে আদর দিয়ে আর মাথায় তুলতে হবেনা মেয়েকে।
এবার যাও তো গোসল সেরে তৈরী হয়ে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যাও।
আসফাক সাহেব তৈরী হয়ে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়া ছিলো প্রতিদিনের রুটিন।
কথা গুলো আনমনে চিন্তা করতে করতে আবারও অদ্রির মা একটি দম বন্ধ হওয়া দীর্ঘশ্বাস ছারেন।
হাতের কাজ টুকু সেরে তিনি নাস্তা নিয়ে অদ্রির ঘরের দিকে হাটা দেন।
আলতো করে পর্দা সরিয়ে ঘরে প্রবেশ করেই উনি দেখতে পান অদ্রি চেয়ারে উপরে দুপা তুলে হাঁটতে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে অপলক দৃষ্টি তে বাবার ছবির দিকে চেয়ে।
অদ্রির মাযের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসে।
খুব দ্রুত উনি নিজেকে সামলে বলতে থাকেন,
কতোদিন বলেছি ছবিটা ওখান থেকে সরিয়ে দেই।
কি লাভ এভাবে তাকিয়ে থেকে?
সে কি জানছে বা দেখছে তোর এক কষ্ট।
নাকি সে একবারও জানতে চেয়েছে বা দেখতে এসেছে কেমন আছিস তুই?
যে মেয়েকে ছাড়া রাতে বাবার ঘুম হতোনা!
অনেক খন মায়ের বকবক শুনে একটু রুক্ষ্ম ভাবে অদ্রি বলে ওঠে আহ্ মা থামবে তুমি?
নিজেও তো প্রতিদিন বাবার বালিশটা চেপে কান্না।
কি ভাবো আমি তা জানি না?
মা চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
কান্না তো আমি তোর বাবার জন্য করিনা,
তবে কিসের জন্য কান্দো মা?
কান্দি আমার ভালোবাসার অপমানের জন্য।
সারা পৃথিবীকে ছেড়ে যে আমি তোর বাবার হাত ধরেছিলাম,
আর সেই তোর বাবা....
অদ্রি চিৎকার করে চুপ করিয়ে দেয় তার মাকে।
অদ্রির মা আর কিছু বলেনা মেয়েকে।
নাস্তা টা খেয়ে নিও বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসে অদ্রির মা।
নাস্তার দিকে তাকিয়ে অদ্রি ভাবতে থাকে
ভালবাসা এতোটা পরিবতর্নশীল কি করে হয়?
যাকে না পেলে একসময় যে মানুষটা মৃত্যু চাইতো সেই পেয়ে যাওয়া ভালোবাসাই মূল্যহীন হয়ে ছেড়ে যায়।
আবার না পেয়েও তো কেউ কেউ শুধু অন্যের পাপের দায় চাপিয়েও চলে যায়।
এই যেমন অর্ক!
কতোই না ভালোবাসতো অদ্রিকে,
একদিন না দেখতে পেলে অভিমানে মুখ ফোলাতো,
রাতে নাকি তার ঘুম হতোনা।
কতো দিন মাঝ রাতে এসে অদ্রিকে আলো আধাঁরিতে দেখে গেছে অর্ক।
অথচ আজ সেই অর্ক ই দেখা তো দুরের অদ্রির নাম শুনলেই নাকি মুখ বাঁকা করে।
অদ্রির তো কোন দোষ ছিলো না কোথায়।
কলেজেও এখন আর যেতে ইচ্ছে করানো অদ্রির।
সবাই কেমন বাবাকে নিয়ে কানাঘুষা করে।
কেউ কেউ তো সরাসরি প্রশ্ন করে বসে কিরে অদ্রি এতদুর এগিয়ে গেলো তর আব্বু তোর আম্মু কি কিছু টের পায়নি?
এসব প্রশ্নের কি উত্তর দেবে অদ্রি?
এসব প্রশ্নের উত্তর তো অদ্রির জানার কথা না।
তবুও সবাই জিজ্ঞাসা করবে।
অনেকটা কাঁটা ঘাঁয়ে মরিচ দেয়ার মতো।
বাবা,অদ্রির সম্পুর্ন রঙ্গিন পৃথিবী হটাৎ করেই ধূসর হয়ে গেলো।
প্রায়ই অদ্রির বাবা,
কাজের জন্য বাইরে টুরে যেতেন এবং ফিরেও আসতেন সময় মতো।
কিন্তু সে বার যে বাবা গেলো সেই শেষ,
ফিরে এলো বাবার পাঠানো আম্মুর জন্য ডিভোর্স লেটার আর কয়েক লাইনের একটি চিঠি।
যার মাঝে অদ্রির নামটাও ছিলোনা।
বাবা জানিয়েছিলেন মা কে এখন তিনি অন্য একজনকে ভালোবাসেন।
তাই আম্মুর সাথে বসবাস করা তার জন্য অসম্ভব।
তার দুইজন বিয়ে করেছে।
নতুন সংসারে আসফাক সাহেব কোন অশান্তি চান্না।
যদি সেচ্ছায় অদ্রির মা ডিভোর্স লেটারে সই করে পাঠাও তো আপোসে শেষ।
কাবিন মোতাবেক যা দেনা পাওনা উনি দিয়ে দেবেন।
আর অদ্রির আম্মু যদি কোর্টে যেতে চায় তাতেও তার আপত্তি নেই। ডিভোর্স তো তিনি নেবেনই মাঝ থেকে একটু দেরি হবে এই যা।
অদ্রির মা আপোস সই করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
যেখানে ভালোবাসাই মূল্য পেলো না।
কোর্ট আর সে সম্পর্কের কি মূল্য দেবে?
অদ্রি পরে লোক মুখে শুনেছে যে মহিলাকে তার আব্বু বিয়ে করেছে সে নাকি আব্বুর অফিসেই চাকরি করতো।
সারাদিন অদ্রি এটাই চিন্তা করে উত্তর পায় না এ সমাজ কেন একজনের পাপের সাস্তি অন্যকে দেয়।
আজ তাকে সম্পূর্ণ একা হয়ে যাওয়া জন্য তো তার কোন কর্ম দায়ী নয়।
অর্ক চলে যাবার সময় বলে গেলো তোমার বাবার রক্তই তো তোমার শরীরে তাই না।
,
লেখিকাঃ- অপরাজিতা 

2 comments: